Sunday 28 February 2016

Kothokota: চুনোরথ  সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন...

Kothokota: চুনোরথ 

সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন...
: চুনোরথ  সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন না, শুধু যারা বিনা বাক্যবেয়ে উনার কথা  মানেন, তাদের কথাই  ওনার মনে ধরে. একবার এক ট্যাক্...

Friday 26 February 2016

চুনোরথ 

সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন না, শুধু যারা বিনা বাক্যবেয়ে উনার কথা  মানেন, তাদের কথাই  ওনার মনে ধরে. একবার এক ট্যাক্সিচালোকের সাথে তুমল মারামারি, সমরেশ বাবু বলছিলেন, উত্তরের কোনায় বাগান বাড়ীটাতে  যেন নামিয়ে দেওয়া হয়, তা নরহরি সে বেপারে  একবারেই রাজী না, বলল কত্তা এতটা পথ আজকে জাতি পার্বুনি। নরহরীকে শেষে বিশাল চাপরা খেতে হয়েছিল. ঝগড়ায়ও  সমরেশ বাবু কম যান না, office এর বিমল বাবুর কথাই ধরা যাক, পাকোড়া  না বেগুনী চা এর সাথে কোনটা বেশী জমে তা নিয়ে বিশাল তর্ক বাধিয়ে বসলেন সেদিন তার সাথে। মোটামুটি মানিয়ে আর মানায়েই  চলতে হয় উনাকে। এত কিছুর পর সেদিন আবার  বড় মেয়ের বায়নাক্কা লাল ফিতা কিনে দিতে হবে. ফিতা কিনলে তো শুধু চলবে না তার সাথে লাল মাদুলি ও চাই. বাজারে যেয়ে উনার মাথা খারাপ, এত লালের মধ্যে উনি চিনবেন কি করে, শেষে সাধন  সেকরাই ঠিক করে দিল, বাবু এটাই নিয়ে যান বড় মা'কে এটাই মানাবে। তা সংসারের যাতাকলে ক্লান্তই দেখায় সমরেশ বাবুকে.

বিধুমালা

দুই বেনী করতে বড্ড ভালবাসে বিধুমালা। আর ভালবাসে মা'র  হাতে বানানো আচারগুলো চেখে দেখতে। রেখে দিয়েছে সে আচারগুলো সযত্নে বার্কশের একদন পিছন দিকে. চিনু বা বিড়াল্গুলোর যেন নজর না পড়ে সেদিকে. মা যে কত রকম আচার বানাতে পছন্দ করতেন! ইশ যদি বিধুমালা সব শিখে নিতে পারত! মা তো চলে যেয়েই খালাস, বিধুর আজকের রান্নার যাতাকলে যেভাবে দিন যাচ্ছে তা কি আর মা দেখতে পান! এক খেন্তপিসি ই ভরসা. যাওয়ার পর পিসি আসা যাওয়া বাড়িয়ে দিয়ে বিধুর রান্নাটা শিখে নিতে সাহায্য করেছে.

দোতলা বাড়ীটা পলেস্তরা খসা  দু তিন জায়গায়। তিনটা কামরার মধ্যে দুই বোন আর সমরেশ বাবুর বাস. সুধাময়ী মারা যেয়ে কিছু সুবিধাই করে গেছেন সমরেশ বাবুর।  সাত বাই দশ হাত খাটটা তে একাই ঘুমাতে পারছেন। মাঝরাতে মাঝে মাঝে তাড়নায় ঘুম ভাঙ্গাটা ছাড়া। ছাদে পানি দিতে গেছিল বিধুমুখী বিকেলে একটু পানি দিয়ে রাখলে রাতে ঘুমানো যায় ভালো। সিলিং ফানের বাতাসে সবটা ঠান্ডা হয় না. পাশের বাড়ির রিতা চুলে বেনী পাকাচ্ছিল বসে বসে, কি করিস রে রিতা ? অভ্ভাস  বসে জিগ্গেস করে বসল বিধুমুখী দেখার পর ও. মুখে একটু তোলা ভাব করে জবাব দেয় রিতা দেখতেই তো পাছিস বাপু , তোরা  যা না দেখেও আবার জানতে চাস. কি আবর জিগ্গেস করলাম, ভারী তো বেনী করা শিখেছিস, রান্নাটান্না  কিছু পারিস না ওই নিজের চর্চা? বারে আমি বুঝি কিছু পারি না, খেকিয়ে ওঠে রিতা মা মন্দিরে গেলে নোটন কে কে দেখে শুনি? চান করতে গেলে দুধ কে খাইয়ে দেয়? ও তা ঠিক, বলে ছাদ থেকে নেমে পড়ে  বিধু। রিতা টা  বড্ড আদিখ্খেতা করতে পারে। তুই কি পারিস  না পারিস  তার ফিরিস্তি কে চেয়েছে!

পরশ স্যার এর পড়াটা এখনো করা হয় নি বিধুর। অঙ্কর  স্যার পরশ বাবু। পড়া একটু কম হলেই চিকন বেত দিয়ে বাড়ি দেন তিনি. বালতি এনে  অঙ্ক করতে বসে বিধু।

এমনিতে পাড়াটা শুনশান হলেও হট্টগোল শোনা যায় মাঝে মাঝে। এই যেমন নিতুন বাবুর ছোট বোন ঝুনু যখন আসে. ঝুনু দক্ষিন পাড়ায় থাকে। দাদার বাসায় আসলে তিন মাসের ভাড়া বাঁচে তার. এই তিন মাস তার বাসায় আরেকটি ফ্যামিলি এনে তোলে বাড়িওয়ালা। ঝুনু একটু দাদার মাথায় তেল দেওয়া, বৌদির কাপড় ধুয়ে দেওয়া এসব করেও দদার বাসায় তিন মাস নির্ঝন্ঝাতে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু সরলার এমনি গলা আর মেজাজ যে বাড়ীতে ঢোকা মাত্রই সারা পাড়া জেনে যায় যে ঝুনু এসেছে। সরলা এম্নিতে খুব  কাজের মেয়ে পান মুখে দিয়ে দিনরাত গুন গুন করে নিজের কাজ করে যায়. মাঝখান থেকে ননদটা এসে পড়লে সংসারের হিসাব খরচে কত এদিক ওদিক হয় তা কি ও বোঝে? বোঝেতো নিজের দুটিকে এনে বিনি পয়সায় মামার কাছে পড়িয়ে নিতে আর জলখাবার  খাইয়ে নিতে। সংসার চালাতে যে কষ্ট করতে হয় সরলাকে তা ঝুনু বুঝেও না বোঝার ভান করে.

রান্নাটা দস্তুর মত শিখতে পেরেছে বিধু। আজকাল আর ডালের অম্বল করতে বা খিছুড়ি কিছু শক্ত রেখেই নামিয়ে রাখতে শিখেছে ও. বিকেলে পায়েসান্নোতে যা একটু লবন এদিক এদিক হয়ে গেলে সমরেশ্বাবু বাড়ি মাথায় তোলেন। ছোট মেয়ে চিনুর ওপর তো আর ভরসা কর যায় না, যা চান তা বিধুকেই সামলাতে হয়. সেদিন যেমন জুতো জোড়া ছাদে রোদে দেয়া  ছিল সমরেশ বাবুর হুকুমে ছাদে আনতে গেলো  চিনু ফিরে এলো কাম্বিসের চটিজোড়া  নিয়ে। দুটো নাকি একই রকম । খুব জোর একটা ধমক দিতে যেয়েও দেননি সমরেশ বাবু। চিনুটা বরাবর একটু বোকা। বাবার সব কাজে সামাল দিতে প্রতি পদে হিমশিম খায় সে.