Sunday 20 January 2019


মনোজাগতিক শিকল:

মনোজাগতিক শিকল ব্যাপারটা নিয়ে প্রায় ই ভাবি। প্রথম কথাটি শুনি মহাজাতকের "কোয়ান্টাম মেথড" কোর্সটা করতে যাওয়ার সময়. মানুষ তার মনের শক্তিকে ব্যবহার করে করতে পারে আপাত দৃষ্টিতে অসাধ্য সাধন, করতে পারে বিশ্ব জয়. আমরা ভাবনা সেখানে না, আমার ভাবনা হলো একটা মুক্ত চিন্তা করা প্রসঙ্গে।  মানুষের মস্তিষ্কে রয়েছে অযুত নিযুত লক্ষ কোটি নিউরোন/  যে নিউরোন সাহায্য করে এক সেল থেকে অন্য সেল এ সংযোগায়ণে। মস্তিষের এই যে বিপুল ক্ষমতা সেই ক্ষমতা কিন্তু দেয়া হয়েছে তাকে কাজে লাগানোর জন্য। একটা পাখি আকাশে উড়ে যাচ্ছে, সীমাহীন তার ব্যাপ্তি। সে হয়তো যাচ্ছে সামান্য খাবারের ই খোঁজে। কিন্তু আমাদের চিন্তাটা তো নিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে কোন সুদূরে যেখানে লক্ষ কোটি বছর ধরে প্রাণী কে তার অন্ন সংস্থান করতে হয় টিকে থাকার তাগিদে। ছোট বেলায় ছাদে গেলে দূরের গাছগুলো দেখতাম আর মুহূর্তেই উদাস হয়ে যেতাম। ইশ! ঐ জায়গাটা কি না জানি কেমন! কত দূর! অথচ  হয়তো দেখা যাবে বেশী দূরে নয় জায়গাটা আমাদের বাসা থেকে।
যে কোনো ঘটনাকে আমাদের স্বার্থের point of view থেকে দেখাটা একটা কাজ. কাজ তো বটেই। ও  আমার কথাটা boss  কে যেয়ে এমন ভাবে বললো, boss আমার উপর ক্ষেপে গেলো। দাঁড়া, situation আসুক আমিও তোকে দেখিয়ে দিচ্ছি, বা দরজা বন্ধ করে boss কে ওর সম্পর্কে বলবো, আবার দরজা খুলে ওকে দেখেই হাসবো যাতে বুঝতে না পারে, ও যদি কোনো কাজের সুযোগ পায় , যদি নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পায় তাহলে তো আমার position নষ্ট হয়ে যাবে, সেটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না, flourish করবো শুধু আমি, শুধু আমি. ওর তেমন কোনো সামাজিক মর্যাদা, টাকা পয়সা নেই. দাওয়াতে যেয়ে ওর সাথে যদি বেশী কথা বলি, মর্যাদা থাকবে? উঁচু দরের মানুষরা আমাকে কদর করবে? নাহ, একটু সরে বসি.
বড়  কঠিন কঠিন সব শর্তে বাঁধা আমরা। যেখানে শুধু স্বার্থের ই জয় হয়. মানবতার নয়.
আমরা সবাই মহাকালের এক একটা entity কারো মূল্য কারো কাছ থেকে কম নয়. "ভাসানী নভ থিয়েটার" এর বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির কিছু ভিডিও দেখেছিলাম। কত বিপুল কর্মকান্ড! ঘটে চলেছে আমাদের ই চারপাশে,মহাকাশে। আর আমরা আছি কেবল ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে! অনন্ত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ আমরা সবাই, বাকি সব ক্ষুদ্র স্বার্থ, ক্ষুদ্র মনে হয়, শূন্য মনে হয়.
মনে হয়
থাক  তবে রয়ে যাক
কিছু গ্লানি,
হৃদয় অতল ছিন্ন করে
বয়ে যাক মধুময় স্রোতস্বীনি/

Saturday 26 November 2016

শুধু জানতাম তুমি আমার হবে এই টুকু বোধ নিয়ে
কাটাতে চাইলাম সারা বেলা,
তা কাটাতে দেবে কেন?
মুখের নীরব হাসি, ম্লান হাসি কেড়ে নিয়ে গেলো আমার সকল মালিন্যকে,
ব্যথার বোধকে, আর হৃদয়ের প্রশস্ততায় দিতে চাইলেম আবারো আশ্রয় তোমাকে।
শত জন্ম ধরে যা দিয়ে আসছি।

ভালোবাসার কঙালীপনায় আমি ক্লান্ত,
ক্লান্ত পথিকের মতো শুধু বলি, দাও গো আমাকে এক মুঠো জল,
দাও একটু বাতাস আর হৃদয়ের প্রশস্ত জমি.
দাও একটু হাসি আর মুক্ত জানালা.
বেশী কিছু?
নাহয় চাইলাম ই একটু বেশী তোমার কাছে, 
তোমার আছে স্বচ্ছ নির্মল ঝর্ণাধারা প্রবাহ,
যা দিয়ে গোসল করাও তোমার মানুষকে,
আমি তো একটু জল ই চাইলাম, 
বাব্বাহ! এতো গরিমা, এতো অহংকার!
কোথায় ছিল সেসব যখন তুমি ভিখিরি ছিলে আমার কাছে?

ম্লান মুখ আর চাই নাক আমি, চাই না তোমার গোমড়া মুখ,
তার বদলে দাও আমাকে তোমার চোখের তারার সেই চাকচিক্য,
আমি বসে আছি, ধ্যানে আছি তা দেখবো বলে,
মুখে মুখে বুলি, ঠোঁটের আড়ালে এক মিষ্টি চাঁদ দেখবো বলেই তো
বসে আছি শত কাঁটার উপরে।
কি ভাবছো?
এতো ধ্যান, এতো জ্ঞান কোথায় ছিল যখন এসেছিলে তুমি টুকরি হাতে?
হ্যাঁ, দিতে চেয়েছি, তার বদলে একটু বেশী সময় নিয়ে ফেললাম।
সময় দিতে তোমার আপত্তি কোথায়? চেতনা যখন আছে, সময় ও তখন থাকবে।
অনন্ত কালের প্রবাহে।

Sunday 19 June 2016

আমার কথা:

১. জীবনের ঝর্ণার গান শুনেছি বহু দূর থেকে,
দূর দূরান্তের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি আমি,
আমি কে, কি তার পরিচয় মাথা তুলে বলিনিকো
কোনোদিন।
কোনোদিন জানো নি তুমি কেমন সেই মেঘবালিকার গান, কেমন তার স্বপ্নের রংধনু।
জানতে চেয়েছিলে কেমন তার হাসি আর শ্বাস প্রশ্বাস?
জানতে চেয়েছিলে কেমন করে ভেঙে চুরে পড়ে তার বালুকাবেলার ঘর?
জানতে চাওনি।



২. আমি কোথায় তুমি জানো তুমি কৈ জানি নাক আর
দেখা হয় না আমাদের পার হয়ে দুস্তর পারাবার।
মন বেহালার পথ ধরে আরবার যদি হয় দূরের আকাশ
দেখা হবে, কথা হবে, শুধু যদি থাকো একবার,
বহু ধুলায়, বহু কণায় মিশে যাবো আমি,
আচ্ছন্নের নতুন বাগানে, নতুন আলোকরেখায়।
মিশে যাবে তুমি দূর নিলীমায়, দেখা দিয়েই চলে যাবে?
তা কেন?
তুমি শুনবে ঝর্ণার গান, আর আলোর হাতছানি,
যার পথ ধরে আমরা হবো
অনন্তের পথে সঙ্গী ও সঙ্গীনি।



৩. মিশে আছি আমি পথের ধুলোয় আর বালুকা বেলায়,
সঙ্গীনি হয়ে তোমার পকেট পেন এর সাথে।
যাবে না নিয়ে?
নিয়ে যাবে?
যেথায় ই যাও তোমার সঙ্গী কে নিয়ে,
দুটি কথা বলবে কি আমার চোখের সাথে,
শুধু হাত দিয়ে নয়,
মন দিয়ে আর দিয়ে বোধ,
আমার বোধের সাথে।
বহু দিন পাই নাতো, সে  বোধের দেখা, যার তার সাথে নয় আমার সত্বা আর তার বোধের সাথে।















 

Sunday 12 June 2016



 আমি ও আমার বিকেল:

১.
একটা বিকেলের অপেক্ষায় থাকি, এক জোড়া হাতের অপেক্ষায় থাকি। একটি হাত বলবে এস গান গাই, এস সম্বোধন করি. আমাদের চা'এর কাপ থেকে উড়ে যাবে এক জোড়া নীল্ধনু মিশে যাবে দিনান্তের নীলিমায়।

২.তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম,
তুমি রবে নীরবে।
ক্লান্তি আমায় যদি এসে ঘিরে ধরে, অঝরের নব কল্লোলে,
গাইব গান হৃদয়ে ধারণ করে
তোমার সুখস্মৃতি, তোমার কল্লোল ধ্বনি,
তোমার বেথার বোধ,
তোমার অহম.
আমি জানতেম তুমি আমার হবে,
শত মরুভূমির বাঁক পেরিয়ে,
শত মরীচিকা অগ্রাহ্য করে.

৩. ব্যাথার বোধ কেমন হয়?
নীল? তা কে বলল তোমাকে?
আমি তো বলব বেথার বোধ হয় সবুজ, হা সবুজ,
সবুজের অতল ভূমি বিছাবে তুমি তোমার হৃদয়ে,
তার মাঝ বইয়ে দিবে সুশীতল বাতাস,
তবেই না বুঝ্বে ভালবাসা কাকে বলে,
ভালবাসার অতল গহীন কী.

ব্যাথা

অনেক ধন্যবাদ!

 

Sunday 28 February 2016

Kothokota: চুনোরথ  সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন...

Kothokota: চুনোরথ 

সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন...
: চুনোরথ  সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন না, শুধু যারা বিনা বাক্যবেয়ে উনার কথা  মানেন, তাদের কথাই  ওনার মনে ধরে. একবার এক ট্যাক্...

Friday 26 February 2016

চুনোরথ 

সমরেশ বাবু রাশভারী মানুষ। সকলের কথা শোনেন না, শুধু যারা বিনা বাক্যবেয়ে উনার কথা  মানেন, তাদের কথাই  ওনার মনে ধরে. একবার এক ট্যাক্সিচালোকের সাথে তুমল মারামারি, সমরেশ বাবু বলছিলেন, উত্তরের কোনায় বাগান বাড়ীটাতে  যেন নামিয়ে দেওয়া হয়, তা নরহরি সে বেপারে  একবারেই রাজী না, বলল কত্তা এতটা পথ আজকে জাতি পার্বুনি। নরহরীকে শেষে বিশাল চাপরা খেতে হয়েছিল. ঝগড়ায়ও  সমরেশ বাবু কম যান না, office এর বিমল বাবুর কথাই ধরা যাক, পাকোড়া  না বেগুনী চা এর সাথে কোনটা বেশী জমে তা নিয়ে বিশাল তর্ক বাধিয়ে বসলেন সেদিন তার সাথে। মোটামুটি মানিয়ে আর মানায়েই  চলতে হয় উনাকে। এত কিছুর পর সেদিন আবার  বড় মেয়ের বায়নাক্কা লাল ফিতা কিনে দিতে হবে. ফিতা কিনলে তো শুধু চলবে না তার সাথে লাল মাদুলি ও চাই. বাজারে যেয়ে উনার মাথা খারাপ, এত লালের মধ্যে উনি চিনবেন কি করে, শেষে সাধন  সেকরাই ঠিক করে দিল, বাবু এটাই নিয়ে যান বড় মা'কে এটাই মানাবে। তা সংসারের যাতাকলে ক্লান্তই দেখায় সমরেশ বাবুকে.

বিধুমালা

দুই বেনী করতে বড্ড ভালবাসে বিধুমালা। আর ভালবাসে মা'র  হাতে বানানো আচারগুলো চেখে দেখতে। রেখে দিয়েছে সে আচারগুলো সযত্নে বার্কশের একদন পিছন দিকে. চিনু বা বিড়াল্গুলোর যেন নজর না পড়ে সেদিকে. মা যে কত রকম আচার বানাতে পছন্দ করতেন! ইশ যদি বিধুমালা সব শিখে নিতে পারত! মা তো চলে যেয়েই খালাস, বিধুর আজকের রান্নার যাতাকলে যেভাবে দিন যাচ্ছে তা কি আর মা দেখতে পান! এক খেন্তপিসি ই ভরসা. যাওয়ার পর পিসি আসা যাওয়া বাড়িয়ে দিয়ে বিধুর রান্নাটা শিখে নিতে সাহায্য করেছে.

দোতলা বাড়ীটা পলেস্তরা খসা  দু তিন জায়গায়। তিনটা কামরার মধ্যে দুই বোন আর সমরেশ বাবুর বাস. সুধাময়ী মারা যেয়ে কিছু সুবিধাই করে গেছেন সমরেশ বাবুর।  সাত বাই দশ হাত খাটটা তে একাই ঘুমাতে পারছেন। মাঝরাতে মাঝে মাঝে তাড়নায় ঘুম ভাঙ্গাটা ছাড়া। ছাদে পানি দিতে গেছিল বিধুমুখী বিকেলে একটু পানি দিয়ে রাখলে রাতে ঘুমানো যায় ভালো। সিলিং ফানের বাতাসে সবটা ঠান্ডা হয় না. পাশের বাড়ির রিতা চুলে বেনী পাকাচ্ছিল বসে বসে, কি করিস রে রিতা ? অভ্ভাস  বসে জিগ্গেস করে বসল বিধুমুখী দেখার পর ও. মুখে একটু তোলা ভাব করে জবাব দেয় রিতা দেখতেই তো পাছিস বাপু , তোরা  যা না দেখেও আবার জানতে চাস. কি আবর জিগ্গেস করলাম, ভারী তো বেনী করা শিখেছিস, রান্নাটান্না  কিছু পারিস না ওই নিজের চর্চা? বারে আমি বুঝি কিছু পারি না, খেকিয়ে ওঠে রিতা মা মন্দিরে গেলে নোটন কে কে দেখে শুনি? চান করতে গেলে দুধ কে খাইয়ে দেয়? ও তা ঠিক, বলে ছাদ থেকে নেমে পড়ে  বিধু। রিতা টা  বড্ড আদিখ্খেতা করতে পারে। তুই কি পারিস  না পারিস  তার ফিরিস্তি কে চেয়েছে!

পরশ স্যার এর পড়াটা এখনো করা হয় নি বিধুর। অঙ্কর  স্যার পরশ বাবু। পড়া একটু কম হলেই চিকন বেত দিয়ে বাড়ি দেন তিনি. বালতি এনে  অঙ্ক করতে বসে বিধু।

এমনিতে পাড়াটা শুনশান হলেও হট্টগোল শোনা যায় মাঝে মাঝে। এই যেমন নিতুন বাবুর ছোট বোন ঝুনু যখন আসে. ঝুনু দক্ষিন পাড়ায় থাকে। দাদার বাসায় আসলে তিন মাসের ভাড়া বাঁচে তার. এই তিন মাস তার বাসায় আরেকটি ফ্যামিলি এনে তোলে বাড়িওয়ালা। ঝুনু একটু দাদার মাথায় তেল দেওয়া, বৌদির কাপড় ধুয়ে দেওয়া এসব করেও দদার বাসায় তিন মাস নির্ঝন্ঝাতে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু সরলার এমনি গলা আর মেজাজ যে বাড়ীতে ঢোকা মাত্রই সারা পাড়া জেনে যায় যে ঝুনু এসেছে। সরলা এম্নিতে খুব  কাজের মেয়ে পান মুখে দিয়ে দিনরাত গুন গুন করে নিজের কাজ করে যায়. মাঝখান থেকে ননদটা এসে পড়লে সংসারের হিসাব খরচে কত এদিক ওদিক হয় তা কি ও বোঝে? বোঝেতো নিজের দুটিকে এনে বিনি পয়সায় মামার কাছে পড়িয়ে নিতে আর জলখাবার  খাইয়ে নিতে। সংসার চালাতে যে কষ্ট করতে হয় সরলাকে তা ঝুনু বুঝেও না বোঝার ভান করে.

রান্নাটা দস্তুর মত শিখতে পেরেছে বিধু। আজকাল আর ডালের অম্বল করতে বা খিছুড়ি কিছু শক্ত রেখেই নামিয়ে রাখতে শিখেছে ও. বিকেলে পায়েসান্নোতে যা একটু লবন এদিক এদিক হয়ে গেলে সমরেশ্বাবু বাড়ি মাথায় তোলেন। ছোট মেয়ে চিনুর ওপর তো আর ভরসা কর যায় না, যা চান তা বিধুকেই সামলাতে হয়. সেদিন যেমন জুতো জোড়া ছাদে রোদে দেয়া  ছিল সমরেশ বাবুর হুকুমে ছাদে আনতে গেলো  চিনু ফিরে এলো কাম্বিসের চটিজোড়া  নিয়ে। দুটো নাকি একই রকম । খুব জোর একটা ধমক দিতে যেয়েও দেননি সমরেশ বাবু। চিনুটা বরাবর একটু বোকা। বাবার সব কাজে সামাল দিতে প্রতি পদে হিমশিম খায় সে.